এক, দুই, তিন। ৩৭ মিনিটের মধ্যে টানা তিন গোল। টিম কাহিলের হ্যাটট্রিক। পরে অধিনায়ক মাইল জেডিন্যাকের আরও এক গোল। এই হল, বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের প্রথমার্ধের নির্যাস। প্রথমার্ধেই চার গোল হজম করে ম্যাচ থেকে কার্যত ছিটকে যায় স্বাগতিক বাংলাদেশ। তবে দ্বিতীয়ার্ধে আর নিজেদের জালে বল প্রবেশ করতে দেয়নি লাল-সবুজের বাহিনী। মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বাছাইপর্বের ফিরতি লেগে স্বাগতিক বাংলাদেশকে ৪-০ গোলে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। টিম কাহিল তিনটি ও জেডিন্যাক একটি গোল করেন। এর আগে অস্ট্রেলিয়ার মাঠে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিল বাংলাদেশ। পার্থের সেই ম্যাচে গোল না পাওয়া কাহিল কাল একাই কাহিল করে দিয়েছেন মামুনুলদের! এছাড়া দারুণ খেলেছেন মিডফিল্ডার মুয়ি। কখনও রক্ষণভাগে নেমে এসে, কখনও আক্রমণভাগে উঠে গিয়ে খেলতে দেখা গেছে তাকে। টিম কাহিলের হ্যাটট্রিকের পেছনেও বড় ভূমিকা রেখেছেন মুয়ি। বলের জোগান দিয়েছেন তিনিই। তাই হ্যাটট্রিক পূরণের পর মুয়িকে জড়িয়ে ধরতে ভুল করেননি টিম কাহিল।
অস্ট্রেলিয়ান ফুটবলের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন কাহিল। লাল-সবুজের এই দেশে সকারুদের নাম নিলে সবার আগে আসবে সাবেক এভারটন তারকার নামটি। ২০০৪ সালে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করা কাহিলকে দেখা বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের কাছে স্বপ্নের মতোই। ঢাকার মাঠে টিম কাহিলকে দেখার সঙ্গে তার হ্যাটট্রিকও দেখা হয়ে গেল তাদের।
এশিয়ার সেরা দল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের ফুটবলারদের উৎসাহ দিতে মাঠে উপস্থিত ছিলেন প্রায় ২০ হাজার দর্শক। মামুনুলদের প্রতিটি আক্রমণেও তারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। বল নিয়ে এগিয়ে গেলেই চিৎকার করে উৎসাহ দিয়েছেন। দেখে মনে হয়েছে, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আর লড়াকু ফুটবল খেলা হলে গ্যালারিতে দর্শক আসবেই। তবে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত একপেশেই হয়েছে। শারীরিক সামর্থ্য আর কৌশলগতভাবে অনেক এগিয়ে থাকা সকারুদের সঙ্গে সেভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই করতে পারেননি মামুনুলরা। দ্বিতীয়ার্ধে অস্ট্রেলিয়াকে গোলবঞ্চিত করা থেকেই যা একটু সান্ত্বনা খুঁজে নিতে পারে স্বাগতিকরা।
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ফিরতি ম্যাচে টিম কাহিলের পরপর তিনটি আঘাতেই যেন কাহিল হয়ে পড়ে লাল-সবুজের শিবির। স্বাগতিক শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন তিনি ম্যাচের ছয় মিনিটেই। বক্সের বাইরে থেকে অ্যারন মুয়ির ফ্রিকিকে আসা বল আলতো টোকায় জালে প্রবেশ করান বক্সে দাঁড়িয়ে থাকা টিম কাহিল (১-০)। ২৬ মিনিট পর দ্বিতীয় গোলের দেখা পান কাহিল। ম্যাচের ৩২ মিনিটে ডানপ্রান্ত দিয়ে অ্যারন মুয়ির শটে আসা বল নিয়ে বক্সে জটলা দেখা দেয়। সেখান থেকেই টিম কাহিল গোল করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন (২-০)। মিনিট পাঁচেক পর নিজের হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন কাহিল। বাঁপ্রান্ত দিয়ে অ্যারন মুয়ির পাস। বক্সের ভেতর থেকে কাহিল কোনাকুনি শটে গোল করেন (৩-০)। ম্যাচের ৪৩ মিনিটে ডানপ্রান্ত দিয়ে মুয়ির ফ্রিকিক। উড়ে আসা বলে ডিফেন্ডার বেইলি রাইট হেড করে বক্সে ঠেলে দেন বল। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা অধিনায়ক জেডিন্যাকের ফের হেড করে গোল আদায় করেন (৪-০)। এশিয়ান চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে চার গোল হজম করেও সাহসের কমতি দেখা যায়নি মামুনুলদের মধ্যে। সুযোগ পেলেই সকারুদের সীমানায় হানা দিয়েছেন তারা। দ্বিতীয়ার্ধে মামুনুলদের প্রতিরোধের মুখে আর গোলের দেখা পায়নি সকারুরা। ফলে ৪-০ গোলের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে তারা।
এই ম্যাচে কম ব্যবধানের হারে কিছুটা স্বস্তি পেতে পারেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের ইতালিয়ান কোচ ফাবিও লোপেজ। কারণ পার্থে প্রথম লেগে সকারুদের কাছে ডাচ কোচ ডি ক্রুইফের অধীনে লাল-সবুজরা হেরেছিল ৫-০ গোলে।
বিশ্বকাপ বাছাই ও এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের চূড়ান্তপর্ব থেকে আগেই বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশ। বি-গ্রুপে ছয় ম্যাচে বাংলাদেশের সংগ্রহ মাত্র এক। ছয় ম্যাচে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে উঠে এসেছে অস্ট্রেলিয়া। পাঁচ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে জর্ডান দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। কিরগিজস্তানের সঙ্গে জিতলে তারা ফের শীর্ষে উঠে যাবে।
Leave a Reply