-
- Uncategorized, বিনোদন, সাহিত্য
- অনুপমও ভেসেছেন সুরের ভেলায়
- Update Time : November, 24, 2015, 7:01 pm
- 591 View

অনুপম রায়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় গানের কথা হল- ‘আমাকে আমার মতো থাকতে দাও/আমি নিজেকে নিজের মতো গুছিয়ে নিয়েছি’। কিন্তু অনুপম রায় নিজেকে যতটাই গুছিয়ে নেন না কেন সোমবার রাতের কনসার্টে শ্রোতারা তাকে তার মতো থাকতে দেননি। তার গানের সঙ্গে নেচে-গেয়ে একাকার করে দিয়েছেন নিজেদের। আর অনুপমও ভেসেছেন সুরের ভেলায়।

অনেকেই একটা ধারণা পোষণ করেন, অনুপম রায়ের গানের ভক্ত এ প্রজন্মের শ্রোতারাই। কিন্তু সত্যিটা হল- শুধু তরণ-তরুণীরাই নয়, অনুপমের গানের ভক্ত ৭ থেকে ৭০ বছরের সঙ্গীতপ্রেমীরাও। সোমবার ‘দুই বাংলার গান’- শীর্ষক কনসার্টে এসে সেটাই প্রমাণিত হল। কনসার্টে শিশুদের উপস্থিতিও ছিল লক্ষ্য করার মতো। উত্তরা থেকে হুইল চেয়ারে ১৩ বছরের সুমি শুধু অনুপমের গান শোনা এবং তাকে একবার দেখার জন্য আসে। সুমি বলে, ‘অনুপম আমার অনেক প্রিয় শিল্পী। বাংলাদেশে তিনি গাইতে আসবেন আর আমি সেটা উপভোগ করতে পারব না তা হয় না। তাই কষ্ট হলেও মাকে নিয়ে গান শুনতে চলে এলাম।’
কলকাতার হালের বাংলা গানের এ ক্রেজ তার গানে গানে একটা সুরেলা রাত উপহার দিয়েছেন ঢাকার শ্রোতাদের। সঙ্গে ছিল তার ব্যান্ডও। বসুন্ধরা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটির নবরাত্রি হলে অন্তর শোবিজের আয়োজনে এ কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়। অনুপম রায় যখন স্টেজে আসেন তখন ঘড়ির কাঁটায় রাত ১০টা। ‘আমি আজকাল ভালো আছি/তোকে ছাড়া রাতগুলো আলো হয়ে আছে’ গানটি দিয়ে পরিবেশনা শুরু করেন তিনি। গান শেষ হতেই বলেন, ‘লাভ ইউ ঢাকা, লাভ ইউ বাংলাদেশ, যতবার বাংলাদেশে আসি ততবারই মনে হয় চেনাপথে হাঁটছি।’ চারিদিকে করতালির রেশ পড়ে যায়। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই অনুপম আবার গাইতে শুরু করেন ‘বেঁচে থাকার গান’। এরপর অনুপম তার জীবনের গল্প থেকে কিছুটা শেয়ার করেন। বলেন, তখন ব্যাঙ্গালুরে চাকরি করতাম, মিস করতাম আমার বাংলাকে। এক সময় গানের জন্য চাকরি ছেড়ে দেই। তারপর প্রথম যে গানটা করলাম সেটা হল- ‘বাড়িয়ে দাও তোমার হাত/ আমি আবার তোমার আঙুল ধরতে চাই।’ কথা শেষ হতেই গানটি গাইতে শুরু করলেন অনুপম। ড্রামের তালে তালে দর্শকরা হাততালি দিয়ে শুভেচ্ছা জানালেন তাকে।
এরপর কিছু আনুষ্ঠানিকতা। স্টেজে আসেন অন্তর শোবিজের চেয়ারম্যান স্বপন চৌধুরী ও র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। অনুপম রায়কে শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দেন বেনজীর আহমেদ।
আনুষ্ঠানিকতা শেষে আবার অনুপমের গান। এবার তিনি পরিবেশন করেন ‘পিকু’ ছবিতে তার গাওয়া গান ‘দ্য জার্নি সং’। গান শুরুর আগে অনুপম বললেন গানটি হিন্দি হলেও আমি কায়দা করে কিছু বাংলা শব্দ ও বাক্য ঢুকিয়ে দিয়েছি। বাঙালি বলে কথা! এরপর পরিবেশন করেন ‘অদ্ভুত মুগ্ধতা’ গানটি। অসম্ভব জনপ্রিয় ‘বসন্ত এসে গেছে’ গানটি গেয়ে হেমন্তের রাতেও যেন বসন্তের আবেশ ছড়িয়ে দিলেন তিনি। অনুপম বললেনও গানে গানে আসলে সবই সম্ভব। তারপর মুখে মুখে ফেরা আরেকটি গান ‘এখন অনেক রাত তোমার/তোমার কাঁধে আমার নিঃশ্বাস।’ এরপর একে একে পরিবেশন করেন ‘এই শোন তুমি শুনতে পাচ্ছো কি’, ‘বেজোবা’, ‘ফাঁকা ফ্রেম’, ‘নেই তো কেউ নেই’ গানগুলো। অনুপম রায় তার এক ঘণ্টারও বেশি সময়ের পরিবেশনা শেষ করেন ‘আমাকে আমার মতো থাকতে দাও’ গানটি পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। সব দর্শকরা এ সময় দু’হাত তুলে গানটির সুরে সুরে দুলতে থাকেন আর গাইতে থাকেন গানের লাইনগুলো।
অনুপমের আগে মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন করেন বাংলাদেশের এ প্রজন্মের দু’জনপ্রিয় শিল্পী পারভেজ ও ন্যান্সি। প্রথমেই রাত ৮টায় মঞ্চে গান নিয়ে আসেন পারভেজ। মূলত সুফি ধারার গান করেন তিনি। ‘এ মনের গহীনে বাসনা’ গানটি দিয়ে তিনি শুরু করেন পরিবেশনা। এরপর একে একে পরিবেশন করেন ‘এ জীবন হারিয়ে যায়’, ‘গোলেমালে গোলেমালে পিরিত কইরো না’, নচিকেতার ‘স্বপ্ন স্বপ্ন স্বপ্ন দেখে মন’, ‘একদিন স্বপ্নের দিন’, ‘পথ গেছে বেঁকে পথের আড়ালে’ গানগুলো। এরপর গান নিয়ে মঞ্চে আসেন বাংলাদেশের এ প্রজন্মের অসম্ভব জনপ্রিয় শিল্পী ন্যান্সি। তিনি প্রথমেই গেয়ে শোনান ‘পৃথিবীর যত সুখ যত ভালোবাসা’। এরপর একে একে তিনি পরিবেশন করেন ‘বাহির বলে দূরে থাকুক ভেতর বলে আসুক না’, ‘বলে তো দিয়েছি হৃদয়ের কথা’। তার শেষ পরিবেশনা ছিল ‘আমি তোমার মনের ভেতর একবার ঘুরে আসতে চাই’। প্রতিটি গানেই শ্রোতাদের ন্যান্সির সঙ্গে গলা মেলাতে দেখা যায়।
তবে এ আয়োজনের মূল ছিলেন অনুপম। অনুপম রায় ছোটবেলা থেকেই গান করলেও তার সঙ্গীত জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য আসে ২০১০ সালে। সেই বছর সৃজিত মুখার্জি পরিচালিত ‘অটোগ্রাফ’ ছবিতে অনুপমের লেখা, সুর করা ও কম্পোজিশনে ‘আমাকে আমার মতো থাকতে দাও’ গানটি অসম্ভব জনপ্রিয়তা পায়। সেই ছেিবত তিনি ‘বেঁচে থাকার গান’ নামে আরেকটি গান লিখেছেন ও সুর করেছেন। এটি গেয়েছিলেন শিল্পী রূপম ইসলাম। এ গানটিও বেশ জনপ্রিয় হয়। এর পরের বছর ‘চলো পাল্টাই’ চলচ্চিত্রে অনুপম রায় সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে আবির্ভূত হন। ২০১২ সালে অনুপম রায় ‘হেমলক সোসাইটি নামে আরেকটি চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালক, গীতিকার ও গায়ক হিসেবে কাজ করেন। এ ছবির গান ‘এখন অনেক রাত’ তাকে এনে দেয় অভাবনীয় সাফল্য। ২০১৪ সালে তিনি ‘হাইওয়ে’ ও ‘চতুষ্কোণ ছবিতে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। সেখানকার ‘বোবা টানেল’ ও ‘বসন্ত এসে গেছে’ গান দুটি সুপার হিট হয়। ২০১৫ সালে অনুপম রায় ‘পিকু’ চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনার মধ্য দিয়ে বলিউড জগতে পা রাখেন সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে। এর বাইরে অনুপম রায় এখন পর্যন্ত তিনটি একক অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন। এগুলো হচ্ছে, দূরবীনে চোখ রাখব না (২০১২), দ্বিতীয় পুরুষ (২০১৩) ও বাক্যবাগীশ (২০১৪)। এ অ্যালবামগুলোর ‘বিজলি বাতি’, ‘তিস্তান’, ‘বেঁচে থাকার গান’, ‘অদ্ভুত মুগ্ধতা’ গানগুলো শ্রোতাপ্রিয় হয়েছে।
Leave a Reply