-
- Uncategorized, সারাদেশ
- পৌরসভা নির্বাচন॥ আওয়ামীলীগ মুখোমুখি আওয়ামীলীগের
- Update Time : December, 6, 2015, 5:10 pm
- 671 View

অনলাইন নিউজ,নারায়ণগঞ্জ প্রতিদিন ডট কম : পৌরসভা নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীর মনোনয়নকে কেন্দ্র করে সারা দেশে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এমপি, এমপির বিরুদ্ধে দলীয় নেতা এমনকি স্থানীয় পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতারাও একে অপরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। এতে শাসক দলটির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব হঠাৎ করেই চাঙ্গা হয়েছে। এমন অবস্থায় নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পাশাপাশি দলীয় প্রার্থীদের পরাজয়ের আশংকা করছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। পরিস্থিতি সামাল দিতে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে মাঠে নেমেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এসব তথ্য।
সূত্রে জানা গেছে, পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের দ্বন্দ্ব নিরসনে দুই সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ও মিজবাহউদ্দিন সিরাজ এ মুহূর্তে মাঠে অবস্থান করছেন। এদের একজন ফরিদপুর ও আরেকজন সিলেটে আছেন। ঢাকা ও সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত এ দুই নেতা তাদের আওতাধীন অন্য জেলাগুলোর দ্বন্দ্ব-কলহ নিরসনেও পর্যায়ক্রমে সংশ্লিষ্ট এলাকা পরিদর্শন করবেন। আওয়ামী লীগের অন্য পাঁচ সাংগঠনিক সম্পাদক সংসদ সদস্য হওয়ায় সরাসরি মাঠে যেতে পারছেন না। কারণ আচরণবিধি লংঘন হতে পারে। তবে তারা ঢাকায় বসে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে নিজ নিজ বিভাগের পৌর এলাকার নেতাকর্মীদের দ্বন্দ্ব ও উত্তেজনা প্রশমনে কাজ করছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম শনিবার যুগান্তরকে বলেন, উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আওয়ামী লীগ দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। এখানে দু-একজনের আকাক্সক্ষা পূরণ নাও হতে পারে। তারাই স্বতন্ত্র মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। দলের যারা স্বতন্ত্র নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তারা আগামী ১৩ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রত্যাহার করে নেবেন। তখন উত্তেজনা প্রশমিত হবে। মোহাম্মদ নাসিম দাবি করেন, ১৩ ডিসেম্বরের পর এক শতাংশও বিদ্রোহী প্রার্থী থাকবে না। এমনকি তার নিজ জেলা সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর পৌরসভার বিদ্রোহী প্রার্থীরাও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
জানা গেছে, পাবনা সদর পৌরসভায় মেয়র পদে প্রথমে মনোনয়ন পান তসলিম হাসান সুমন। এক ঘণ্টার মধ্যে এ মনোনয়ন পরিবর্তন করে দেয়া হয় রাকিব হাসান টিপুকে। তিনি জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। টিপু আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মন্ত্রীর সমর্থক বলে পরিচিত। এখানে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী নেতা কামিল হোসেন। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে বর্তমানে মনোনয়ন পাওয়া রাকিব হাসান টিপু আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবু ইসহাক শামীমের বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছিলেন। তাই টিপুকে ঠেকাতে কামিল হোসেনকে দাঁড় করিয়েছেন আওয়ামী লীগে তার প্রতিপক্ষরা। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পাবনা সদরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন।
উত্তর জনপদের আরেক জেলা সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া পৌরসভায়ও রয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। থানা আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য ফয়সাল কাদের রুমি স্থানীয় পুরনো নেতাকর্মীদের সমর্থন নিয়ে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বলে জানা গেছে। এ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন পৌর শাখার সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম। তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য তানভীর ইমামের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। মূলত আওয়ামী লীগের পুরনো নেতাকর্মী এবং নতুনদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব পৌর নির্বাচনে প্রতিফলিত হয়েছে। এখানেও মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ।
একই অবস্থা এ জেলার শাহজাদপুরে। এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক মেয়র হালিমুল হক মিরু। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাসের অনুসারী। লতিফ বিশ্বাস বর্তমানে সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রশাসক। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রহিম। তিনি স্থানীয় সরকারদলীয় সংসদ সদস্য হাসিবুর রহমান স্বপনের অনুসারী বলে পরিচিত। মিরু ও রহিমের প্রার্থিতার কারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। নেতাকর্মীরাও পরস্পর মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন।
হবিগঞ্জ সদর পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতাউর রহমান সেলিম। তিনি জেলা যুবলীগের সভাপতি। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু জাহিরের ভাগ্নে তিনি। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন আবু জাহিরের ভাতিজা মোদাচ্ছেরুল ইসলাম। একই পরিবার থেকে সব নির্বাচনে প্রার্থী দেয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ। মূলত তারাই পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমানকে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। তাই পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সেখানে আওয়ামী লীগ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে।
যশোরের অবস্থা আরও খারাপ। এখানে সদর পৌরসভায় প্রার্থী মনোনয়ন দেয়াকে কেন্দ্র করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন সংগঠনের জেলা সভাপতি শহীদুল ইসলাম মিলন, স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদসহ জেলার বাকি সংসদ সদস্যরা। সদর পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু। তিনি শাহীন চাকলাদারের চাচাতো ভাই। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী নেতা সাবেক মেয়র এসএম কামরুজ্জামান চুন্নু।
রাজশাহীর মন্ডুমালা পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বর্তমান মেয়র ও তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রাব্বানী। তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এ পৌরসভায় স্বতন্ত্র মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আহসানুল হক স্বপন এবং প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক লুৎফর রহমান। বিদ্রোহীদের একজন আহসানুল হক স্বপন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের সমর্থক বলে পরিচিত।
উল্লিখিত পৌর সভাগুলোর মতো শতাধিক পৌরসভার মেয়র প্রার্থী মনোনয়নকে কেন্দ্র করে স্থানীয় নেতাকর্মীদের বিরোধ চরমে উঠেছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
Leave a Reply