Tuesday, November 24th, 2015




কোথায়, কখন টিভি দেখবেন?

টেলিভিশনে হুসমায়ূন আহমেদের ধারাবাহিক নাটক শুরু হবে এখনই। বাড়ির ছোটরা তাড়াতাড়ি পড়া শেষ করে এসে বসার ঘরে ভালো জায়গাটা দখল করে নিয়েছে। একে একে ভিড় জমাচ্ছেন মা, বাবা, দাদু এমনকি তাড়াতাড়ি কাজ সেরে বাড়ির গৃহকর্মীও। বেশি দিন তো নয়, নব্বইয়ের দশকেও টেলিভিশন ছিল একটা পারিবারিক বিনোদন, মধ্যবিত্তের আবশ্যিক ‘ড্রয়িংরুম কালচার’। সবাই মিলে টিভি অনুষ্ঠান উপভোগ করাটাই ছিল নিয়ম। আর এখন! বাড়ির কর্ত্রী হয়তো এক কাপ চা নিয়ে ঢুকে পড়লেন নিজের শোয়ার ঘরে—এখনই তাঁর প্রিয় সিরিয়াল শুরু হবে। কর্তা বিপিএলের ক্রিকেট দেখবেন, আরেকটা টেলিভিশন থাকলে ভালো, নয়তো তিনি পত্রিকায় মুখ গুঁজলেন। ছেলেমেয়েদের কারও হাতে আইপ্যাড। টেলিভিশনকেন্দ্রিক পারিবারিক বিনোদনের আন্তরিক আবহ উধাও হয়ে গেছে নাগরিক জীবন থেকে। টিভি একেবারেই ব্যক্তিগত একটা উপভোগের বিষয় এখন। বসার ঘর ছেড়ে তাই টেলিভিশনের জায়গা হয়েছে শোয়ার ঘরে, বিছানার বিপরীতে। টিভি আসলে কোন ঘরে থাকা উচিত, কখন দেখবেন, এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, শোয়ার আগে বিছানায় শুয়ে টেলিভিশন দেখার কারণে বিশ্বজুড়ে মানুষের নির্ঘুমতা ও ঘুমের ব্যাঘাতজনিত সমস্যা বাড়ছে। টেলিভিশন, কম্পিউটার বা সেলফোন—এসবের মনিটরে যে নীল আলো থাকে, তা চোখের রেটিনার মাধ্যমে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসে চলে গিয়ে মেলাটোনিন নামের রাসায়নিক নিঃসরণে দেরি করিয়ে দেয়। মেলাটোনিন হলো আমাদের ঘুমপাড়ানি রাসায়নিক। ফলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।
আবার টেলিভিশনে নানা উত্তেজক দৃশ্য দেখার কারণে যে স্ট্রেস বা মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়, তার কারণে অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি থেকে স্ট্রেস হরমোন নিঃসৃত হতে থাকে। এটি মস্তিষ্ককে দীর্ঘক্ষণ জাগিয়ে রাখে এবং সহজে ঘুম আসতে চায় না। যুক্তরাষ্ট্রের স্লিপ ফাউন্ডেশনের পরামর্শ হলো, ঘুমের অন্তত আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা আগ থেকে সব ইলেকট্রনিক যন্ত্র বন্ধ করে নিতে হবে।
মস্তিষ্ককে চাপমুক্ত রাখতে হবে, রিলাক্স করতে হবে। বরং শুয়ে শুয়ে কিছুক্ষণ বই পড়া যায়। এ ছাড়া বিছানায় শুয়ে বা আধশোয়া হয়ে টিভি দেখার কারণে হতে পারে ঘাড় ও মেরুদণ্ডের নানা সমস্যা। অনেকে টিভি দেখতে দেখতেই ঘুমিয়ে পড়েন, এটা আরও বেশি খারাপ।
তাহলে আসুন শুনি, আধুনিক শহুরে বাড়িতে কোথায় টেলিভিশন বেশি মানায়। এ নিয়ে রেডিয়েন্ট ইনস্টিটিউট অব ডিজাইনের চেয়ারপারসন গুলসান নাসরীন চৌধুরী বলেন, সব বাড়িতে ফ্যামিলি লিভিং রুম নাও থাকতে পারে। সেÿক্ষেত্রে বসার ঘরেই একটি দেয়ালে টেলিভিশন রাখার বন্দোবস্ত করা সবচেয়ে ভালো। যে দেয়ালে টিভি রাখা হবে, সেটা এমনিতে একটা সলিড দেয়াল হওয়াই উচিত, যেখানে দরজা-জানালা নেই।
বর্তমানে টিভির সঙ্গে ডিভিডি, হোম থিয়েটার, গেমস ইত্যাদি অনেক কিছু থাকে, থাকে অনেক তার, এই তারগুলো ঢাকার ব্যবস্থা করতে হবে। একটা ছোট বক্স বা কেবিনেট করে সেগুলো ভেতরের দিকে ঢুকিয়ে দেওয়া যায়। কেবিনেটে বইপত্র, অ্যালবাম, দু-একটা শো পিস রাখলে ভালো দেখাবে। টেলিভিশনের চারপাশে অতিরিক্ত জিনিসপত্র রাখলে অনুষ্ঠানে মনোযোগ হারিয়ে যেতে পারে বা চোখের ব্যাঘাত হতে পারে।
একসঙ্গে টেলিভিশন দেখার কারণে অনেক সময় নিজের প্রিয় অনুষ্ঠান মিস হতে পারে। কিন্তু অন্যের পছন্দকে মূল্য দেওয়াটাকেও চর্চা করতে হবে পরিবারে। বাড়ির শিশুরা শিখবে যে কেবল কার্টুন চালালেই হবে না, অন্যদেরও পছন্দ-অপছন্দ আছে। গুলসান নাসরীন মনে করেন, ছোটদের ঘরে টিভি রাখাটা একদম ঠিক নয়। এতে তার নিঃসঙ্গতা যেমন বাড়বে, তেমনি কমবে শেয়ার করার অভ্যাস। তা ছাড়া সে কী দেখছে না দেখছে, সে সম্পর্কে কোনো ধারণাই করা যাবে না।
এখন আসুন জেনে নিই, কী ধরনের ঘরে কত বড় টিভি লাগানো যায়। অবশ্যই ঘরের ও সাইজের কথা বিবেচনা করেই টিভিটা কিনতে হবে। একটা ৪০ ইঞ্চি পর্দার টিভি লাগাতে হলে ঘরটা ১৬ x ১৮ ফুট হওয়া উচিত। যত বড় টিভি, তা থেকে বসার বন্দোবস্ত তত দূরে হবে। ৪০ ইঞ্চি টিভি থেকে কমপক্ষে ৪ থেকে ৬ ফুট দূরে বসতে হবে, আবার ৫০ ইঞ্চি টিভি হলে বসতে হবে সাড়ে সাত ফুট দূরে। তাই টিভি কেনার আগে যাচাই করে নিন, কোথায় কোন ঘরে বসাবেন।
দেয়ালেই হোক বা কেবিনেট বা টিভি ট্রলির ওপরই রাখেন—টেলিভিশনটা এমনভাবে রাখতে হবে, যেন তা চোখের সমান্তরালে বসে। টিভি দেখতে গিয়ে যেন ঘাড় বাঁকাতে বা উঁচুনিচু করতে না হয়। ভিউয়িং অ্যাঙ্গেল যেন ১৫ ডিগ্রির বেশি ওপর-নিচ এবং ৪০ ডিগ্রির ওপর ডানে-বামে না যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category