নারায়ণগঞ্জ প্রতিদিন ডট কম : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় নারী-শিশু ও বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করতে না পারলে দেশ অভিশাপমুক্ত হবে না। এদের বিচার এবং রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ যে দীর্ঘদিন ধরে অভিশপ্ত ছিল, তা থেকে আস্তে আস্তে মুক্তি পাচ্ছে। আর মুক্তি পাচ্ছে বলেই দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।
গতকাল সোমবার রাতে দশম জাতীয় সংসদের অষ্টম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, একাত্তর সালে তারা যে অপরাধ করেছিল, তার সীমা নেই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে, এখনো যাঁরা স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে বেঁচে আছেন, অন্তত তাঁদের মনটা শান্তি পাবে, তাঁরা বিচার পাচ্ছেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করলেও তাঁর মৃত্যুর পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে সামরিক অধ্যাদেশ দিয়ে সেই বিচার বন্ধ করে দেন এবং যাঁরা বিভিন্ন কারাগারে বন্দী ছিলেন, তাঁদের মুক্ত করে দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, জেনারেল জিয়ার সময় তাঁদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন করা হয়। স্বাধীনতাবিরোধী ও রাজাকার শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী এবং আবদুল আলীমকে মন্ত্রী বানানো হয়। লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত পতাকা তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এর থেকে দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে। তিনি বলেন, পাশাপাশি পঁচাত্তরের আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়। জেনারেল এরশাদের সময় তাঁদের রাজনৈতিক দল করার সুযোগ দেওয়া হয়। খুনি ফারুককে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন করার সুযোগ দেওয়া হয়। তাঁকে সাংসদ বানানোর চেষ্টা ছিল। খালেদা জিয়া ১৫ ফেব্রুয়ারির প্রহসনমূলক নির্বাচনে রশীদ-হুদাকে জয়ী ঘোষণা করে সংসদে এনেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৩ নভেম্বরের হত্যা মামলার আসামিকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। খুনিদের লালন-পালন, আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছিল। আমরা ১৫ আগস্টের খুনিদের বিচার করেছি, ৩ নভেম্বরের খুনিদের বিচার করেছি। আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, যা জিয়াউর রহমান বন্ধ করে দিয়েছিলেন, সে বিচার শুরু করেছি, রায়ও কার্যকর করা শুরু করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, ধর্মান্তরিতকরণসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার। ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত ২১টি রায় হয়েছে। চলতি বছর হয়েছে ছয়টি। এখন পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালে যে কটি মামলার রায় হয়েছে, তার মধ্যে ১৭টির বিরুদ্ধে আপিল হয়েছে। তিনি বলেন, যারা স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি, যারা হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করেছিল, তারা ও তাদের দেশি-বিদেশি শক্তির ষড়যন্ত্রে জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় বলে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, বিচারের নামে প্রহসন করা হয়।
মুসলিম-অধ্যুষিত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ এখনো নিরাপদ বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুসলিম-অধ্যুষিত দেশে কিছু না কিছু গোলমাল লাগানো হচ্ছে। একমাত্র বাংলাদেশ এখনো নিরাপদ আছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ নিরাপদ না অনিরাপদ, এ নিয়ে সরকারকে যথেষ্ট কথা শুনতে হয়েছে। একটা পর্যায়ে এমন অবস্থার সৃষ্টি করা হচ্ছে যে জোর-জবরদস্তি করে বাংলাদেশে আইএস আছে, জঙ্গি আছে—এ ধরনের একটা ঘোষণা দেওয়ার পাঁয়তারা করা হচ্ছিল।
প্রধানমন্ত্রী কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘যেসব দেশ একসঙ্গে বসে জটলা করে, নানাভাবে, এমনকি আমাদের কোনো কোনো মন্ত্রীর সঙ্গে বসে ওই একটা কথাই বলার চেষ্টা করেছে যে এখানে আইএস আছে, জঙ্গি আছে ইত্যাদি ইত্যাদি। কাজেই তাদের দেশের অবস্থা কী, সেটা বুঝতে পারছেন। সেই তুলনায় ১৬ কোটি মানুষের বসবাসের এই বাংলাদেশে আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারছি। তিনি দেশের মানুষের কাছে আহ্বান জানিয়ে বলেন,কোনো জঙ্গি বা আইএস যাতে স্থান না পায়, তার জন্য সর্বান্তঃকরণে সম্মিলিতভাবে কাজ করে যেতে হবে। আমেরিকার একটা সংস্থার প্রতিবেদনে এসেছে যে বাংলাদেশ এখন ওই আমেরিকার থেকে বেশি নিরাপদ। বাংলাদেশকে আমরা এভাবে শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে রাখতে চাই। এ জন্য সবাইকে সক্রিয় হতে হবে। কোথাও কোনো ধরনের ঘটনা দেখলে বা জঙ্গি সন্ত্রাসীদের দেখলে সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করতে হবে। †kL হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। উন্নয়নের যে গতিশীলতা পেয়েছে, তা কেউ রোধ করতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রীর সমাপনী ভাষণ শেষে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশন সমাপনী-সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ পড়ে শোনান।
Leave a Reply