অনেক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও দেশে নতুন বিনিয়োগের জন্য জমি পাওয়া যাচ্ছে না। আবার গ্যাস-বিদ্যুৎ নিয়ে অনেক কথা হলেও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাব রয়েছে। সরকারের বিভিন্ন ধরনের নীতির মধ্যেও সমন্বয় নেই। ফলে ব্যবসায়ীরা ভুগছেন।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে এক সেমিনারে একাধিক ব্যবসায়ী নেতা এসব কথা বলেন। সমস্যা তুলে ধরার পাশাপাশি বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে আরও কী করতে হবে সে বিষয়ে পরামর্শ দেন তাঁরা। তবে সবাই একবাক্যে বলেছেন, বাংলাদেশের সম্ভাবনা অনেক। ঢাকা চেম্বার মিলনায়তনে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন চেম্বারের সভাপতি হোসেন খালেদ।
অবশ্য সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে না আসার পেছনে বাংলাদেশের যা আছে তা বহির্বিশ্বে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে না পারাকেই দায়ী করেছেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক-বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তিনি।
গওহর রিজভী বলেছেন, ‘এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশে সবকিছু বিদ্যমান আছে। তারপরও একটা বৈসাদৃশ্য আছে। এ ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হচ্ছে, নিজেদের যা আছে তা ঠিকঠাকভাবে আমরা বহির্বিশ্বে উপস্থাপন করতে পারছি না। অনেক ক্ষেত্রে অবমূল্যায়নও করছি।’
ভারতের উদাহরণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, ‘ভারত একসময় নিজেরাই নিজেদের সমালোচনা করত। তবে অবকাঠামোসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধান করার পর নিজেদের সঠিকভাবে উপস্থাপন করেছে তারা। সে জন্যই আজ তারা বিশ্বের এক নম্বর উদীয়মান অর্থনীতির দেশ।’
নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে জমি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ পাওয়াটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা—ব্যবসায়ীদের এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে গওহর রিজভী বলেন, বিনিয়োগ বোর্ড গত কয়েক বছরে দারুণ কাজ করেছে। তারপরও তাদের সমালোচনা করা হয়। তবে বিনিয়োগ বোর্ড ও বেসরকারীকরণ কমিশন একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এটি হয়ে গেলে সমস্যা কমে আসবে।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি হোসেন খালেদ বলেন, ‘দেশে বছরে গড়ে ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে ১২৯ কোটি ডলার এফডিআই আসে, যা দেশের জিডিপির ১ শতাংশের কম। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছাতে হলে এটি ৬ শতাংশে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।’
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আবরার এ আনোয়ার বলেন, ‘ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। ভারত ও চীনের খুব কাছে। প্রচুর তরুণ শ্রমশক্তি আছে, যারা ঐতিহ্যগতভাবেই কঠোর পরিশ্রমী। ১৬ কোটি মানুষের এই দেশে অভ্যন্তরীণ চাহিদাও বিরাট। ফলে বিনিয়োগকারীদের কাছে এখানে রপ্তানি ও অভ্যন্তরীণ বাজার দুটোই ধরার সুযোগ আছে।’ তিনি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে রাস্তাঘাট, গ্যাস-বিদ্যুৎ, বন্দরের মতো মৌলিক অবকাঠামোতে অর্থায়নকে চ্যালেঞ্জ মনে করেন। তবে একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, এটা অসম্ভব কিছু নয়।
ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) প্রোগ্রাম ম্যানেজার এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, শুল্কনীতির কারণে বাংলাদেশ জুতাশিল্প মূল্য প্রতিযোগিতা সক্ষমতা অর্জন করতে পারছে না। তাই চীনের ছেড়ে দেওয়া সুযোগটি নেওয়া যাচ্ছে না। যেটি হয়েছে পোশাকশিল্পের ক্ষেত্রে।
সেন্টার ফর এনআরবির চেয়ারম্যান এম এস সেকিল চৌধুরী বলেন, এক কোটি প্রবাসী বাঙালি বছরে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা দেশে পাঠান। তাঁরা বছরে ৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করার সক্ষমতা রাখেন। তবে এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর মাধ্যমে বিনিয়োগ তহবিল পাঠানোর ব্যবস্থা নেই। এটি করা গেলে এফডিআইয়ের প্রয়োজন হবে না। সে জন্য এনআরবি বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষ গঠন করা গেলে কাজে আসবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী। মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী সদস্য নাভাস চন্দ্র মণ্ডল। আরও বক্তব্য দেন ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি রাশেদ মাকসুদ খান, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান এ এম এম শাহদাৎ হোসেন প্রমুখ।
Leave a Reply