ডেস্ক রিপোর্ট,নারায়ণগঞ্জ প্রতিদিন ডট কম : রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকের বিরুদ্ধেই গ্রাহকের সবচেয়ে বেশি অভিযোগ। সদ্যবিদায়ী ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকে গ্রাহকের যত অভিযোগ জমা হয়েছে তার মধ্যে ২৫৬টি অভিযোগই সোনালী ব্যাংকের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের সব কটিরই নিষ্পত্তি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস বিভাগের বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। গতকাল রোববার বিকেলে বার্ষিক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গভর্নর আতিউর রহমান।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত অর্থবছরে বিভিন্ন ব্যাংকের বিরুদ্ধে মোট ৩ হাজার ৯৩০টি অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্যে লিখিত অভিযোগ ছিল ২ হাজার ৫৪২টি আর টেলিফোনে অভিযোগ করা হয় ১ হাজার ৩৮৮টি। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, গ্রাহকের সব কটি অভিযোগেরই চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে, গ্রাহকের প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে শীর্ষ ১০টি ব্যাংকের তালিকা করা হয়েছে। গ্রাহকেরা সবচেয়ে বেশি যেসব ব্যাংকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, তার ভিত্তিতে এ তালিকা করা হয়। তাতে সোনালী ব্যাংকের পরের অবস্থানে রয়েছে বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংক। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এ ব্যাংকটির বিরুদ্ধে গ্রাহকেরা ১৭৫টি অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের দিক থেকে এরপরের অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে রূপালী (অভিযোগ ১৪৯টি), অগ্রণী (১৪০টি), ইসলামী ব্যাংক (১২৩টি), জনতা (১০৬টি), কৃষি ব্যাংক (৮২টি), বিদেশি ব্যাংক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড (৭৯টি), ডাচ্-বাংলা (৭০টি) এবং ন্যাশনাল ব্যাংক (৫৯টি)।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, গ্রাহকের অভিযোগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ছিল সাধারণ ব্যাংকিং নিয়ে। সাধারণ ব্যাংকিংয়ে ভোগান্তি নিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকের বিরুদ্ধে ১ হাজার ৩৬১টি অভিযোগ করা হয়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬৭০টি অভিযোগ জমা পড়েছে ঋণ ও অগ্রিম নিয়ে।
প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে গভর্নর বলেন, ব্যাংকের গ্রাহকসেবার বিষয়টি এখন সারা বিশ্বে অগ্রগণ্য বিষয় হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। বাংলাদেশেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্থিতিশীল আর্থিক ব্যবস্থার পাশাপাশি ব্যাংকিং সেবার মানোন্নয়নের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। এ জন্য ২০১১ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রথমে ‘হেল্প ডেস্ক’ চালু করে। পরে তা গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণ কেন্দ্র (সিআইপিসি) হিসেবে নামকরণ করা হয়। কেন্দ্র চালুর পাশাপাশি গ্রাহকের অভিযোগ জানানোর সুবিধার্থে একটি হটলাইন (১৬২৩৬) নম্বর যুক্ত করা হয়েছে। গ্রাহকের অভিযোগ জানানোর সুবিধার্থে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি মোবাইল অ্যাপস তৈরিরও উদ্যোগ নিয়েছে।
এদিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে গ্রাহকের প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক অভিযুক্ত বিভিন্ন ব্যাংকে ১২৭টি পরিদর্শন কার্যক্রম চালিয়েছে। যার মধ্যে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে ৯৪টি, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে ২৮টি এবং বিদেশি মালিকানাধীন ব্যাংকে ৫টি পরিদর্শন কার্যক্রম চালানো হয়।
প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে গভর্নর জানিয়েছেন, গ্রাহক অভিযোগ কেন্দ্র খোলার পর থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ১৫ হাজার অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এ সময় গভর্নর বলেন, বর্তমান ব্যবস্থায় গ্রাহককে হয়রানি ও ঝামেলামুক্ত সেবা প্রদানই ব্যাংকিং খাতের অঙ্গীকার হওয়া উচিত।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা একটি কেস স্টাডি থেকে জানা গেছে, জুবায়ের হোসেন নামে একজন গ্রাহক বেসরকারি একটি ব্যাংকের কাছ থেকে নিলামে জমি ক্রয়ের আবেদনে অংশ নেন। ওই ব্যাংকের ‘ডারবি’ নামের এক ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানের জমি বিক্রির জন্য ব্যাংক ওই নিলাম আহ্বান করেছিল। নিলামে অংশ নিয়ে জুবায়ের সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হন। সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে জমির মূল্য বাবদ ব্যাংকে ৬ লাখ ১০ হাজার টাকা জমা দেন। পরবর্তী সময়ে জুবায়ের জানতে পারেন, নিলামে তোলা ওই জমি বিরোধপূর্ণ ও অন্যের দখলে। তখন তিনি ওই জমি কিনতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন এবং ব্যাংকের কাছে জমা দেওয়া টাকা ফেরত চান। কিন্তু ব্যাংক ওই টাকা ফেরত দিতে গড়িমসি শুরু করলে জুবায়ের বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ করেন। পরে যথাযথ তদন্তপূর্বক বাংলাদেশ ব্যাংক জুবায়েরকে টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
Leave a Reply